বর্তমানে তরুণ সমাজ ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিংকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। কারণ ফ্রিল্যান্সিংয়ে একমাত্র স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়, বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলো বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই লেখাটির মাধ্যমে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিদিন নুতন নুতন ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং একই সাথে তৈরি হচ্ছে অনেক ফ্রিল্যান্সিং সাইট, যেগুলোর মাধ্যমে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা কাজ পেয়ে থাকে। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ পেতে অনেক সময় লাগে বা ঐ সকল মার্কেটপ্লেসে নিজের প্রোফাইল তৈরি করে নিতে অনেক কষ্ট ও সময়ের প্রয়োজন।
যার ফলে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, বাংলাদেশে অনেক মার্কেটপ্লেস আছে যেগুলোতে অহরহ কাজ পাওয়া যায়। নতুন ফ্রিল্যান্সাররা এই সকল মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার ওয়েবসাইট
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং সাইটের চাহিদা
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলোর বর্তমানে অনেক চাহিদা রয়েছে, কারণ বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলোর অনেক উপকারিতা আছে – যেমন এই সকল সাইট গুলোতে বাংলাদেশি বায়ারের সংখ্যায় বেশি, আমরা যদি ইংরেজিতে একটু দুর্বল হই তা হলেও সমস্যা নেই। যেহেতু বাংলাদেশী বায়ার সেহেতু বাংলা ভাষায় কথা বলা যাবে।
এছাড়াও বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে ইন্টারন্যাশনাল সাইটগুলোর থেকে প্রতিযোগিতা অনেক কম, ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে প্রায় সব দেশের বড় বড় ফ্রিল্যান্সাররা থাকে যেখানে কাজ পাওয়াটা খুব কঠিন হয়ে যায়।
কিন্তু বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলোর বেলায় পুরোটাই উল্টো এখানে শুধুমাত্র বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা থাকে এবং এখানে প্রতিযোগিতাও তুলনামূলকভাবে অনেক কম যার কারণে কাজ পাওয়াটা একটু সহজতর।
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলোর সুবিধা
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট তথা মার্কেটপ্লেস আছে যেখানে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা অনেক কাজ পেয়ে যাবেন। এবং বাংলাদেশি ফ্রীলান্সিং ওয়েবসাইটগুলোর অনেক সুযোগ সুবিধা আছে যা আমরা ইন্টারন্যাশনাল ওয়েবসাইটগুলোতে না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
- আমরা অনেকেই ইংরেজিতে একটু দুর্বল যার কারনে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসগুলোতে যেতে সাহস পাচ্ছিনা, কোন চিন্তা নেই আমরা বাংলাদেশি ফ্রীলান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতে কাজ করতে পারব, এখানে বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ আছে।
- বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে পেমেন্ট নিয়ে কোন চিন্তা নেই, কোন ফ্রিল্যান্সারকে কাজ দেয়ার আগে বায়ার দের সেই কাজের পারিশ্রমিক ওয়েবসাইটের কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে হয় – ফ্রিল্যান্সাররা কাজ শেষ করার পরে বায়াররা সঠিকভাবে তাদের কাজটি বুঝে পেলে তখন ফ্রিল্যান্সারদের কাছে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। যার ফলে পেমেন্ট নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তার প্রয়োজন নেই।
- তুলনামূলকভাবে এখানে প্রতিযোগিতা অনেক কম।
- যেহেতু এই সকল সাইট গুলোতে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা কম, সেহেতু অনেক কাজ পাবার সম্ভাবনা আছে।
- ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসগুলোতে একটি বড় সমস্যা হল পেমেন্ট কিভাবে আনবেন, হয়তো পেপাল বা মাস্টারকার্ড এর প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে এই ঝামেলা নেই আপনারা চাইলে বিকাশ এর মাধ্যমে পেমেন্ট আনতে পারবেন।
- এছাড়াও বাংলাদেশি ফ্রীলান্সিং সাইট গুলোতে অনেক সুযোগ সুবিধা আছে।
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং সাইট
উপরে আমরা বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং সাইট এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবার চলুন জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলো কি কি । এবং এই সকল সাইটগুলোতে আপনারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
-
Belancer :
বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি ফ্রিল্যান্সিং সাইট এটি। 2015 সালে জুনায়েদ আহমেদ পলক বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও সরকারি সহযোগিতায় এর যাত্রা শুরু হয়।
ফ্রিল্যান্সারদের কাছে বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় এই প্লাটফর্ম টি। এখান থেকে পেমেন্ট নিতে হলে আপনাকে ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, মাস্টার কার্ড এবং বিকাশ এর মাধ্যমে নেওয়ার সুবিধা আছে। এছাড়াও বর্তমানে ফ্রিল্যান্সারদের আরো বেশি কাজের সুযোগ তৈরি করতে বাংলাদেশের বাহির থেকেও অনেক কাজ নিয়ে আসে বিল্যান্সার ওয়েবসাইটটি।
এখানে ফ্রিল্যান্সাররা যে সকল কাজ পাবেন সেগুলো হলো:
- ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট
- অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
- কনটেন্ট রাইটিং
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া
- সেলস মার্কেটিং
- ইত্যাদি, এছাড়াও অনেক কাজ পাওয়া যায় বাংলাদেশি এই সাইটটিতে।
বিল্যান্সার এ পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই, এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে থাকে বিল্যান্সার অফিশিয়াল টিম। এরা খরচ হিসাবে ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে 5% কমিশন নিবেন।
-
Truelancer :
বিল্যান্সার এর মত অন্য আরেকটি জনপ্রিয় বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট হল Truelancer , বর্তমানে 1 মিলিয়ন এর ও বেশী ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে এই সাইটটিতে। এই সাইটটি শুধুমাত্র বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ না বাহির থেকেও অনেক কাজ আসে এই সাইটটিতে।
এজন্য ফ্রিল্যান্সারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং সাইটটি। এই সাইটটিতে প্রচুর পরিমাণে কাজের সুযোগ রয়েছে। ফ্রিল্যান্সাররা যেসকল কাজ পাবেন এই বাংলাদেশি ফ্রীলান্সিং সাইটে –
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- ওয়েব ডিজাইন
- ওয়েব ডেভলপমেন্ট
- এসইও
- কনটেন্ট রাইটিং
- ইত্যাদি, এছাড়াও এই সাইটটিতে অনেক কাজ রয়েছে।
-
Shocchol :
2020 সালে প্রতিষ্টিত হয় সচ্ছল নামের এই ওয়েবসাইটটি। এটি একটি বাংলাদেশি ফ্রীলান্সিং মার্কেটপ্লেস এর প্রতিষ্ঠাতার নাম হল সাদিক হোসাইন।
সচ্ছল মার্কেটপ্লেসকে বাংলাদেশের দ্বিতীয়তম ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস বলা হয়, জনপ্রিয় এই ফ্রিল্যান্সিং সাইট টিতে প্রত্যেকদিন অনেক জব পোস্ট করা হয়। এবং প্রত্যেকদিন নতুন নতুন ফ্রিল্যান্সার এর আবির্ভাব হচ্ছে এই ওয়েবসাইটটিতে।
এখানে ফাইবার এর মত গিগ তৈরি করার সুযোগ রয়েছে যাতে আপনার রেটিং যদি ভাল হয় তাহলে বেশি কাজ পাবার সম্ভাবনা থাকে। যারা ইংরেজীতে একটু দুর্বল তাদের জন্য বাংলাদেশী এই ফ্রিল্যান্সিং সাইট টি। এখানে কাজ করতে আপনার তেমন কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হবেনা কিন্তু অবশ্যই কাজের উপরে দক্ষতা থাকতে হবে।
সচ্ছলে যে সকল কাজ সহজে পাওয়া যায়:
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- এসইও
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
- অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
- ওয়েব ডিজাইন
- ভিডিও তৈরি ও এনিমেশন
- কনটেন্ট রাইটিং
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- ডাটা এন্ট্রি
- কাস্টমার কেয়ার
- ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
- আর্টিকেল রাইটিং
- ইত্যাদি, এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিংয়ের অনেক খুঁটিনাটি কাজ এই ওয়েবসাইটটিতে পাওয়া যায়।
সচ্ছল ডটকমে পেমেন্ট নিয়ে কোনো চিন্তা নেই এখানেও ঠিক বিল্যান্সার এর মত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। আমার মতে বাংলাদেশি ফ্রীলান্সিং এর জনপ্রিয় সাইট গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় তম হল সচ্ছল।
-
OutsourceMyjob :
বর্তমানে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং সাইট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এই ওয়েবসাইটটি। এদের দাবি অনুসারে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট এটি।
এই ওয়েবসাইটটিতে কম্পিটিশন অনেক কম যার ফলে ফ্রিল্যান্সাররা সহজেই কাজ পেতে পারে। তাই ফ্রিল্যান্সারদের কাছে দ্রুত বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সাইটটি। সাইটটিতে সাধারণত যে সকল কাজ পাওয়া যায়:
- ওয়েব ডিজাইন
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
- অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
- এসইও
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- লোগো ডিজাইন
- ডাটা এন্ট্রি
- কনটেন্ট রাইটিং
এ সকল কাজ ছাড়াও ওয়েবসাইটটিতে আরো অনেক কাজ পাওয়া যায়, বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এই সাইটটি।
উপরে উল্লিখিত বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলো থেকে আপনারা ফ্রিল্যান্সিং করে প্রতিমাসে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন। আর এখান থেকে পেমেন্ট নেয়ার জন্য তেমন কোন চিন্তা করতে হবে না যেহেতু দেশী সাইট তার জন্য আমরা বিকাশে পেমেন্ট নিতে পারবো এছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে ।
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট সম্পর্কে কোন তথ্য জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন।