মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন। জমির দলিল দিয়ে ব্যাংক থেকে যেই লোন নেয়া হয় তাকে মর্টগেজ লোন বলে। জমির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন নেয়ার পদ্ধতি এবং এই লোন সম্পর্কে বিস্তারিত এই লেখাটিতে আলোচনা করা হবে পাশাপাশি মর্টগেজ লোন নেয়ার জন্য কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন সে সম্পর্কে জানানো হবে।
ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা লোন নেয়ার জন্য অবশ্যই কিছু জামানত রাখা প্রয়োজন। মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন নেয়ার জন্য আপনারা জমির দলিল জমানত হিসেবে রাখতে পারেন। মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন অনেক বেশি সময়ের জন্য নেয়া সম্ভব।
মর্টগেজ লোন কি?
ব্যাংক কিংবা লোন প্রদানকারী কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে নির্দিষ্ট মেয়াদে গ্রাহকের কোন স্থায়ী সম্পদ বন্ধক রেখে লোন গ্রহণের পদ্ধতিকে মর্টগেজ লোন বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গ্রাহকরা জমানত হিসেবে জমির দলিল বন্ধক রাখে। ব্যাংকের মর্টগেজ লোন সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হয়।
উদাহরণস্বরূপ – মনে করেন আপনি একটি গাড়ি কিংবা বাড়ি ক্রয় করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে আপনার অনেক টাকা লোন নেয়া প্রয়োজন। সাধারণ স্বার্থে ব্যাংক থেকে আপনি এত টাকা লোন গ্রহন করতে পারবেন না। এবং কোন ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জমানো ছাড়া এত টাকা লোন প্রদান করবে না।
সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে ব্যাংক থেকে মর্টগেজ লোন তথা জমির দলিল বন্ধক রেখে নির্দিষ্ট মেয়াদে বন্ধকী লোন গ্রহন করতে পারবেন। এই ঋণ কিস্তির মাধ্যমে অথবা এককালীনভাবে পরিশোধ করতে পারবেন।
মর্টগেজ লোন নেয়ার সুবিধা
অন্যান্য সকল লোনের থেকে মর্টগেজ লোনে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। সাধারণত বেশি অংকের টাকা লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে মর্টগেজ লোন নিতে হয়। মর্টগেজ লোন নেয়ার কিছু সুবিধা হলঃ
- অনেক বেশি অংকের টাকা লোন পাওয়া যায়।
- সমান কিস্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লোনের টাকা পরিশোধের সুযোগ।
- অনেক বেশি সময়ের লোন পাওয়া যায়।
- সুদের হার বহনযোগ্য মাত্রায় থাকে।
- সম্প্রতি বিক্রয়ের প্রয়োজন হয় না।
- জামানতকৃত সম্পত্তি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। শুধুমাত্র ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে পারবেন না।
এছাড়াও মর্টগেজ বা বন্ধকী লোনে অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করা যায়।
জমির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন
জমির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন নেয়ার পদ্ধতিকে মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন বলা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সকল ব্যাংকে মর্টগেজ লোন প্রদান করে। জমির দলিল জমা দিয়ে ব্যাংক লোন নেয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে সঠিকভাবে জমির মূল দলিল সংগ্রহ করতে হবে এবং পরবর্তীতে নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় কর্মরত ম্যানেজারের সাথে এ-বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
জমিয়ে দলিল জমা দিয়ে ব্যাংক লোন নেয়ার জন্য প্রথমে আপনারা ব্যাংক নির্বাচন করবেন এরপর উক্ত ব্যাংকের শাখায় গিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। এবং উক্ত ব্যাংকের মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিয়ে মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন গ্রহণ করতে পারেন।
জমির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন নেয়ার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
জমির দলিল জামানত হিসেবে রেখে ব্যাংক থেকে লোন গ্রহন করার জন্য যেসকল ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে সেগুলো হলঃ
- জাতীয় পরিচয় পত্র।
- ইউটিলিটি বিলের কপি।
- জমির মূল দলিল ও বায়া দলিল।
- সিএস রেকর্ড/ এস এ রেকর্ড/ আর এস রেকর্ড ও বি এস রেকর্ড খতিয়ান প্রয়োজন হবে।
- D C R (জমি খারিজ করার সময় প্রধানকৃত রশিদ)
- খারিজ পেপার।
- N C R (সংশ্লিষ্ট বছরের মধ্যে জমি বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা)
- মৌজারিট (প্রয়োজন হতে পারে)
- ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট গত ১ বছরের।
- যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে মালিকানা সাপেক্ষ সকল প্রমাণ পত্র।
- ঋণের চুক্তিপত্র।
- এমপ্লয়মেন্ট সার্টিফিকেট এবং সেলারি সার্টিফিকেট (চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে)
- ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে গত তিন বছরের ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স।
- অংশীদারী ব্যবসার ক্ষেত্রে অংশীদার চুক্তিপত্র প্রয়োজন হবে।
- গত ১ বছরের সকল ব্যাংক বিবরণী (সকলের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে)
জমির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন নেয়ার জন্য উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টসগুলো পূর্বে সংগ্রহ করতে হবে তবে ব্যাংক ভেদে ডকুমেন্টস কমবেশি প্রয়োজন হতে পারে। লোন নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাংক সিলেক্ট করে উক্ত ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে তাদের মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন সম্পর্কে জেনে নিবেন।
লোন নেয়ার পূর্বে ব্যাংকে যোগাযোগ করে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিলে ডকুমেন্টগুলো জোগাড় করতে সহজতর হবে এবং পরবর্তীতে ডকুমেন্টগুলো প্রদান করে খুব সহজে জমির দলিল জামানত রেখে লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
মর্টগেজ বা বন্ধকী লোনের সুদের হার
মর্টগেজ বা বন্ধকী লোনের সুদের হার শতকরা ১২% থেকে ১৫% হয়ে থাকে। আপনার প্রপার্টির পরিমান এবং লোনের অ্যামাউন্ট হিসেব করে সুদের হার কম-বেশি হতে পারে। এছাড়াও ব্যাংক ভেদে মর্টগেজ বা বন্ধকী লোনের সুদের হার কমবেশি হয়।
পার্সোনাল লোন এর তুলনায় মর্টগেজ লোনে সুদের হার অনেক কম এবং হোম লোনের পরে সব থেকে কম সুদে পাওয়া যায় মর্টগেজ লোন। যার কারনে অনেকেই মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন রেফার করে। অন্যান্য সকল লোনের তুলনায় বন্ধকী লোনে ইন্টারেস্ট রেট তথা সুদের হার অনেকটা কম।
আপনার সম্পদের পরিমাণ ও লোনের মেয়াদকাল এককালীন পেমেন্ট সিলেক্ট করে লোনের এমাউন্ট সম্পর্কে জানতে পারেন b-property লোন ক্যালকুলেটর এর মাধ্যমে।
মর্টগেজ বা বন্ধকী লোনের ক্ষেত্রে কি কি যাচাই করা হয়
জমির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন নেয়ার আগে যেসকল তথ্যগুলো যাচাই করা হয় সেগুলো হলঃ আবেদনকারীর মাসিক ও বাৎসরিক ইনকাম এবং আবেদনকারীর পেশা ও কর্ম অভিজ্ঞতা। গত ৩ বছরের কড় প্রদান করার রশিদ ও টিন সার্টিফিকেট।
আবেদনকারীর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এবং জামানতকৃত সম্পদের যথার্থতা। আবেদনকারীর বর্তমান কর্মরত প্রতিষ্ঠান ও আবেদনকারীর যদি চলমান এবং অপরিশোধিত লোন থাকে তার তথ্য। বন্ধকী সম্পদের মূল্য ইত্যাদি। এছাড়াও ব্যাংক কর্মকর্তারা বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিয়ে দেখবে এবং আবেদনকারীকে যাচাই করবে।
মর্টগেজ লোনের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা
মর্টগেজ বা বন্ধকী লোনের জন্য আবেদন করতে আপনাকে কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হবে এবং সঠিক বয়স হতে হবে। চলুন জেনে নেই মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন পাবার জন্য কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ২১ বছরের বেশি হতে হবে।
- উপার্জনে সক্ষম এবং ঋণের পরিবর্তে বন্ধকী সম্পদের মালিক হতে হবে।
- মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা থাকতে হবে।
- অবশ্যই ইনকাম সোর্স থাকতে হবে।
- লোন গ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত কারণ দেখাতে হতে পারে।
- বন্ধকী সম্পদের সঠিক মালিকানা ও মালিকানা প্রমাণপত্র থাকতে হবে।
- লোন ভঙ্গন বা ব্যাংক কেলেঙ্কারি জাতীয় কোন অপপরিচয় থাকা যাবে না।
- আবেদনকারী কি অবশ্যই এই দেশের একজন সু-নাগরিক হতে হবে।
এছাড়াও ব্যাংক বেঁধে বিভিন্ন ধরনের শর্ত থাকে। যেই শর্তগুলো পূরণ করে উক্ত ব্যাংক থেকে খুব সহজেই মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন গ্রহন করতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য –
জমির দলিল বন্ধক দিয়ে ব্যাংক লোন নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই উক্ত ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে সকল তথ্য জেনে নিবেন। এবং সাধারণত মর্টগেজ বা বন্ধকী লোনের ক্ষেত্রে আপনার জমানোতকৃত সম্পত্তির দামের ৬০%-৭০% টাকা লোন প্রদান করা হবে। লোনের টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধিত হলে আপনার জমানত ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
FAQs – এই বিষয়ে সম্পর্কিত সাধারণ কিছু প্রশ্ন উত্তর
“জমির দলিল দিয়ে ব্যাংক লোন নেয়ার পদ্ধতি” লেখাটিতে আলোচিত বিষয়ে সমূহ মধ্য থেকে বিবেচিত সাধারণ কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর।
মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন নেয়ার সময় আমরা জমানত হিসেবে যেই সম্পত্তি রাখবো উক্ত সম্পত্তি গুলো লোনের সকল টাকা পরিষদের পরে ব্যাংক এগুলো মালিককে ফিরিয়ে দিবে।
মর্টগেজ লোন সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে পাওয়া সম্ভব। অন্যান্য লোনে থেকে এই লোন পেতে একটু বিরম্বনা হয় কেননা মর্টগেজ বা বন্ধকী লোন প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক যাচাই-বাছাই ও ভেরিফিকেশন এর প্রয়োজন। ব্যাংক বা ব্যাংকের শাখাভেদে লোন পাবার সময় কম বেশি হতে পারে।
উপরে লেখাটিতে আলোচিত সকল বিষয় সম্পর্কে যদি আপনি জানেন এবং মর্টগেজ লোন নেয়ার জন্য কেমন যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন এই লেখাটি যদি আপনি দেখেন এখানে আলোচিত যোগ্যতা থাকলে অবশ্যই আপনি মর্টগেজ লোন পেতে পারবেন।
জমির দলিল দিয়ে কত টাকার লোন নেয়া যাবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার জমাকৃত সম্পত্তির উপর। সাধারণভাবে আপনার জমাকৃত সম্পত্তির দামের ৬০% থেকে ৭০% টাকা লোন প্রদান করা হয়। ব্যাংক ভেদে এই অ্যামাউন্ট কম বেশি হতে পারে।