পাসপোর্ট শব্দটি মূলত ফারসি ভাষার একটি শব্দ । পাসপোর্ট কে একজন নাগরিকের তার দেশ ও ব্যক্তিগত পরিচয় পত্র বলা যায় । আপনি যদি বৈধ ভাবে অন্য কোন দেশের প্রমাণ করতে চান তাহলে আপনার অবশ্যই পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে । পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে থাকা একজন ব্যক্তির নাগরিকত্ব এর পরিচয় দেয় এই পাসপোর্ট । আপনি যদি পৃথিবীর যেকোন জায়গায় ভ্রমণ করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে। এছাড়াও পাসপোর্ট আমাদের অনেক উপকারে আসে আজকের লেখাটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং পাসপোর্ট করার নিয়ম । এবং কিভাবে পাসপোর্ট করা যায়। পাসপোর্ট করতে কি কি প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পাসপোর্ট কি
পাসপোর্ট হচ্ছে একজন নাগরিকের তার নাগরিকত্বের পরিচয় পত্র । বৈধভাবে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে ভ্রমণ করতে হলে অতিব জরুরী একটি জিনিস হল পাসপোর্ট । পাসপোর্ট হলো ছোট একটি বই আকারে এইট এর ভিতরে আপনার নিজস্ব পরিচয় এবং আপনার নাগরিকত্বের পরিচয় ও আপনার বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি সম্পর্কিত সকল তথ্য উল্লেখ করা আছে।
এছাড়াও পাসপোর্ট আমাদের অনেক উপকারে আসে আমরা এনআইডি কার্ড তথা আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্র এর বিকল্প হিসেবে পাসপোর্ট এর ব্যবহার করতে পারি। পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হলে আমাদেরকে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিস অথবা বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে নিতে হবে ।
পাসপোর্ট কত প্রকার
এনআইডি কার্ড অথবা জাতীয় পরিচয় পত্র এর বিকল্প একজন নাগরিকের পরিচয় পত্র হিসেবে আমরা পাসপোর্ট কে ধরতে পারি । একজন নাগরিকের তার ব্যক্তিগত পরিচয় এবং তার নাগরিকত্বের পরিচয় সম্পূর্ণ হিসেবে পাসপোর্ট কাজ করে । আমরা যদি পৃথিবীর কোন প্রান্তে ভ্রমণ করতে চাই তাহলে অবশ্যই অবশ্যই আমাদের পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হবে । এই পাসপোর্ট সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে।
- সাধারণ পাসপোর্ট (পুরাতন বা ম্যানুয়াল পাসপোর্ট)
- ই-পাসপোর্ট (অনলাইন পাসপোর্ট)
পাসপোর্ট করার সহজ নিয়ম
আমরা যে কেউ চাইলেই পাসপোর্ট করে নিতে পারি না পাসপোর্ট করার জন্য আমাদের একটা নিয়ম কানুন এর ভিতর দিয়ে যেতে হবে । আমরা পাসপোর্ট কে সাধারণত যে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি সাধারণ পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট এর আবেদন করার সকল নিয়ম কানুন সম্পর্কে নিচে আলোচনা করব সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অনুরোধ করা হলো । তার আগে চলুন জেনে নেই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হলে আমাদের কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন ।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
আমরা পাসপোর্ট কে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি একটি হলো সাধারণ পাসপোর্ট আর অন্যটি হলো ই-পাসপোর্ট । পাসপোর্ট এর আবেদন করার জন্য আমাদের কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে । পাসপোর্ট করতে আমাদের কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তা সঠিকভাবে না জেনে আমরা যদি পাসপোর্ট করতে যাই তাহলে তাহলে হয়তো আমাদের আবার সঠিক কাগজপত্র নেওয়ার জন্য বাসায় ফিরে আসতে হতে পারে তাই পাসপোর্ট করতে যাবার আগে অবশ্যই আমাদের জেনে যাওয়া ভালো যে পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন ।
পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন
সাধারণ বা মেনুয়াল পাসপোর্ট করতে আমাদের যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তা হল ।
- পাসপোর্ট আবেদন ফরম ডাউনলোড করে সেটা দুই কপি প্রিন্ট করে ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- ফরমটি ডাউনলোড করার জন্য এই লিংকে প্রবেশ করুন
- টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে লিঙ্ক টি সরিয়ে নেওয়া হলো
- ফরমের 4 নম্বর পৃষ্ঠা কোন বিসিএস ক্যাডার সরকারি কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করতে হবে।
- আবেদনকারীর সদ্যতোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ফরমের সাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে।
- আবেদনকারী যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয় তথা তাঁর বয়স যদি 15 বছরের নিচে হয় তাহলে তার অভিভাবক তার মা এবং বাবা এর স্ট্যাম্প সাইজের রঙিন ছবি দুই কপি করে সত্যায়িত করে ফরমে লাগিয়ে দিতে হবে ।
- এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন কার্ড-এর দুই কপি সত্যায়িত ফটোকপি ।
- কারিগরি পেশায় জড়িত এবং ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার কিংবা ড্রাইভার হলে তাদের পেশাগত সনদের প্রয়োজন হবে ।
- অফিসিয়াল পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে সরকারি আদেশ বা জিও সংযুক্ত করতে হবে ।
- অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে তাদের পেনশন বুকের ফটোকপি সাথে জমা দিলে সাধারণ ফি তে জরুরী সেবা পাবেন তারা ।
ই পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন
ই-পাসপোর্ট তথা ইলেকট্রিক্যাল পাসপোর্ট করতে আমাদের যে সকল কাগজপত্র এর প্রয়োজন হবে ।
- ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে এই ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুন
- কোন কাগজ পত্র সত্যায়িত করার প্রয়োজন হয় না ।
- এনআইডি কার্ড / জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ ( অনলাইন করা থাকতে হবে)
- আবেদনকারী অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলে জন্ম নিবন্ধন কার্ড এর পাশাপাশি তার মা-বাবার ভোটার আইডি কার্ড।
- কারিগরি পেশায় জড়িত এবং ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার কিংবা ড্রাইভার হলে তাদের পেশাগত সনদের কপি আপলোড করতে হবে ।
- পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করার পর আঞ্চলিক অফিসে যাওয়ার সময় অনলাইনে আবেদন এর প্রমাণস্বরূপ আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি সাথে করে নিয়ে যেতে হবে ।
- ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার রশিদ দরকার হবে
- বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা যদি ভিন্ন হয় সেক্ষেত্রে নাগরিক সনদ পত্রের প্রয়োজন হবে।
- স্টুডেন্ট হলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড অথবা প্রত্যয়ন পত্রের মূল কপি এবং ফটোকপি সাথে করে নিয়ে যেতে হবে ।
- এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র এবং অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ এর মূলকপি সাথে নিতে হবে
- ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ সকল ফটোকপি গুলো এবং অনলাইনের প্রিন্ট কপি একসাথে পিন মেরে অফিসে জমা দিতে হবে ।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আশাকরি পাসপোর্ট এর আবেদন করার জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন ।
নতুন পাসপোর্ট করার নিয়ম
নতুন পাসপোর্ট করার জন্য আপনাকে প্রথমে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে সেখান থেকে রশিদ নিয়ে অনলাইনে পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হবে । এবং আবেদন করার পরে আবেদন কপি প্রিন্ট নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে ।
এর পরে বিভিন্ন ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে আপনাকে নিশ্চিত করবে । এছাড়াও আপনি পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। আবেদন ও ভেরিফিকশন সম্পন্ন হওয়ায় ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে আপনি পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা খরচ হয়
এইখানে পাসপোর্ট কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় ১ : সাধারণ পাসপোর্ট ২: জরুরী পাসপোর্ট । দুই ধরনের পাসপোর্ট এর খরচ আলাদা আলাদা হবে । সাধারণ পাসপোর্ট এর ফি থেকে জরুরী পাসপোর্ট এর ফি একটু বেশি ।
সাধারণ পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
সাধারণ পাসপোর্ট এর ফি হল ৩৪৫০ টাকা (কমবেশি হতে পারে)
জরুরী পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
জরুরী পাসপোর্ট এর ফি হল ৬৯০০ টাকা (কমবেশি হতে পারে)
পাসপোর্ট এর আবেদনের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম
আমরা দুইভাবে পাসপোর্ট এর আবেদন ফি জমা দিতে পারব একটি হল অনলাইন এর মাধ্যমে – অন্যটি ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে।
গুরুত্বপূর্ণ টিকাঃ 125 টাকা বিকাশ থেকে ফ্রিতে
অনলাইনের মাধ্যমে কিভাবে পাসপোর্ট আবেদনের ফি জমা দেয়া
অনলাইনের আবেদন এর মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদনের ফি এর টাকা জমা দিতে হবে । অনলাইনে আবেদন করার সময় আবেদনের শেষ দিকে টাকা জমা দেওয়ার একটা অপশন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করে আপনি বিকাশ, রকেট ও ব্যাংক কার্ড ইত্যাদি এর মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদনের ফি জমা দিতে পারবেন । মোবাইল ব্যাংকিং এর খরচ হিসাবে আপনার একাউন্ট থেকে সামান্য ৩-৭ টাকার মত কেটে নেওয়া হবে । অনলাইনের মাধ্যমে আপনি খুব সহজে পাসপোর্ট আবেদনের ফি জমা দিতে পারবেন ।
ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদনের ফি জমা দেয়া
যারা ম্যানুয়াল ভাবে পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করেছেন তাদের আবেদন ফি ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে । আপনি যদি ম্যানুয়াল ভাবে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে নূতন পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করেন তাহলে আপনাকে ব্যাংক এর মাধ্যমে আবেদন ফি পরিশোধ করে রশিদ নিতে হবে ।
কোন ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদন ফি জমা দিবেন
আমরা অনেক সময় পাসপোর্ট এর আবেদন ফি জমা দিতে গিয়ে হিমশিম খাই এর কারণ আমরা সঠিকভাবে জানি না কোন ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট এর আবেদন ফি জমা দিব । আপনি যে সকল ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট এর আবেদন ফি জমা দিতে পারবেন ।
- সোনালী ব্যাংক
- ঢাকা ব্যাংক
- প্রিমিয়াম ব্যাংক
- ওয়ান ব্যাংক
- ব্যাংক এশিয়া
- ইত্যাদি – এছাড়াও আরও অনেক ব্যাংক আছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি পাসপোর্ট আবেদন ফি জমা দিতে পারবেন।
পরিশেষে :
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং পাসপোর্ট করার নিয়ম যে সকল ইনফরমেশন বা তথ্য প্রয়োজন তা সঠিকভাবে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি । যদি কোন জায়গায় কোন তথ্যে ভুল থাকে তাহলে অবশ্যই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং কমেন্ট এর মাধ্যমে ভুলটি ধরিয়ে দিবেন – আমরা শুধরে নেয়ার চেষ্টা করব ধন্যবাদ সকলকে ।