আমরা বিভিন্ন সময় আর্থিক সমস্যার কারণে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে থাকি। ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য আমাদের কিছু নিয়মকানুন জানতে হবে, ব্যাংক কিভাবে লোন দিয়ে থাকে সে বিষয়ে জানতে হবে। সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার উপায়
লোন শব্দটি মূলত ইংরেজি শব্দ এর বাংলা অর্থ হল কর্য করা বা ধার নেয়া। আমরা যদি কারো কাছ থেকে কোন কিছু ধার’নি বা কর্য করি তাকে লোন নেয়া বলে। ঠিক এভাবে আমরা যদি ব্যাংকের কাছ থেকে কর্য করি বা ধার নেই তাহলে তাকে ব্যাংক লোন বলে।
সাধারণ ব্যাংক গুলো সঞ্চয় এর টাকা গুলোর মধ্যে তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য কিছু টাকা হাতে রেখে বাকি টাকাগুলো লোন হিসেবে প্রধান করে এবং এই লোন এর উপহার সংগৃহীত সুদ হল ব্যাংকের মুনাফার মূল অংশ। ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার পূর্বে আপনাকে সঠিকভাবে যাচাই করতে হবে আপনি লোনের টাকা দিয়ে কি কাজ করবেন।
মনে করেন আপনি ব্যাংক থেকে টাকা লোন নিয়ে গরুর খামার করবেন, তাহলে প্রথমে আপনাকে গরুর খামারের উপর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে না হলে এই ব্যবসায় আপনার লস হবার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। তাই ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে বুঝেশুনে লোন নিতে হবে।
ব্যাংক লোন কাকে বলে
ব্যাংক লোন বলতে আমরা বুঝি ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা কর্য করা বা ধার নেয়া। বিভিন্ন সময় আর্থিক সমস্যার কারণে বা কোন ব্যবসা দাঁড় করানোর লক্ষ্যে মানুষ ব্যাংকের কাছ থেকে লোন নিয়ে থাকে। ব্যাংক নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদের হারের বিনিময় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লোন দিয়ে থাকেন।
সাধারণত ব্যাংক জনগণের কাছ থেকে আমানত হিসাবে যে টাকা জমা রাখে ওই টাকাগুলোর মধ্যে থেকে কিছু টাকা তাদের দৈনন্দিন চলাচলের খরচ হিসেবে রেখে বাকি টাকা গুলো ঋণ হিসেবে প্রদান করে এর বিনিময় ব্যাংক ঋণ কারীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে সুদ আদায় করে। সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় এবং কি কি খাতে আপনারা ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
ঋণ কারীরা ব্যাংকের কাছ থেকে দুটি পদ্ধতিতে লোন আনতে পারবেন একটি হলো কিস্তিতে লোনের টাকা পরিশোধ আর অন্যটি হলো এককালীন ভাবে লোনের টাকা পরিশোধ। সাধারণত ব্যাংক থেকে বেশিভাগ লোন গুলো নিয়ে থাকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে। তবে ব্যাংক থেকে লোন নিলে অবশ্যই তাদেরকে নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হবে।
ব্যাংকের লোন কত প্রকার ও কি কি
ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল লক্ষ্য হল তাদের গ্রাহকদের সর্বদা সর্বাধিক সেবা প্রদান করে মুনাফার টাকা অর্জন করা। ব্যাংকের লোনের ভিতরে প্রকারভেদ আছে। আমাদের দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম অনুযায়ী ব্যাংকের লোন ২ প্রকার হয়ে থাকে, যেমনঃ
১/ প্রকৃতি অনুযায়ী লোন প্রদান।
২/ মেয়াদ অনুযায়ী লোন প্রদান।
প্রকৃতি অনুযায়ী লোন প্রদান হলো ব্যাংক যে সকল খাতে তাদের গ্রাহকদের লোন দিয়ে থাকে আর মেয়াদ অনুযায়ী লোন প্রদান হল নির্দিষ্ট একটা সময় ধার্য করে লোন দেয়া। নিচে ব্যাংকের লোন এর প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
অল্প পুজিতে লাভজনক কয়েকটি ব্যবসা আইডিয়া
মেয়াদ অনুযায়ী লোন প্রদান
মেয়াদ অনুযায়ী লোন প্রদান এর ক্ষেত্রেও এটিকে ২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ
- স্বল্পমেয়াদী লোন : স্বল্পমেয়াদী লোন হল ১ বছর বা তার কম সময়ের জন্য ব্যাংক থেকে যে লোন নেয়া হয় তাকে স্বল্পমেয়াদী লোন বলে। স্বল্পমেয়াদী লোন এর সময়সীমা হবে সর্বনিম্ন ১ ঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত।
- দীর্ঘমেয়াদী লোন : দীর্ঘমেয়াদী লোন হলো ১ বছরের উপর থেকে ২০ বছর সময়সীমায় যে লোন নেয়া হয় তাকে দীর্ঘমেয়াদি লোন বলে। সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি লোনের সুদের হার খুব বেশি হয়ে থাকে, এই লোনগুলো নেয়া হয়ে থাকে কল-কারখানা নির্মাণ বা কোন কোম্পানি প্রতিষ্ঠায়।
প্রকৃতি অনুযায়ী লোন প্রদান
প্রকৃতি অনুযায়ী প্রধান কে ২ ভাগে ভাগ করা যায়, প্রকৃতি বলতে আমরা বুঝি ধর্ম বা জাত।
- দলিলি লোন : দলিলি লোন হল বিভিন্ন প্রকার দলিলপত্রের মাধ্যমে যে লোন নেয়া হয়।
- তাহবিল লোন : আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যাংক তাদের তহবিল থেকে কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সুদের হারে যে লোন দিয়ে থাকে তাকে তাহবিল লোন বলা হয়। তাহবিল লোন এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নগদ অর্থ প্রদান করে।
ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ
ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য লোন এর অনেকগুলো প্রকারভেদ সিলেক্ট করেছে। বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যাংক বিভিন্নভাবে গ্রাহকদের লোন দিয়ে থাকে, ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার ক্ষেত্রে আপনি কোন কাজের জন্য লোন নিবেন সেটা আগে সিলেক্ট করতে হবে। ব্যাংক লোন এর প্রকারভেদ গুলোঃ
- বিজনেস লোন : ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার জন্য যে লোন দিয়ে থাকে তাকে বিজনেস লোন বলে।
- পার্সোনাল লোন : ব্যক্তিগত প্রয়োজন মিটানোর জন্য ব্যাংক যে ধরনের লোন দিয়ে থাকে তাকে পার্সোনাল লোন বলে।
- হোম লোন : বাড়ি ঘর তৈরির জন্য বা ক্রয় করার জন্য ব্যাংক যে ধরনের লোন দিয়ে থাকে তাকে হোম লোন বলে।
- কৃষি লোন : কৃষকদের কৃষিকাজ করার জন্য বা কৃষিকাজের সামগ্রী কেনার জন্য ব্যাংক লোন দিয়ে থাকে তাকে কৃষি লোন বলে।
- স্টুডেন্ট লোন : শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করার জন্য যে ধরনের লোন প্রদান করে ব্যাংক তাকে স্টুডেন্ট লোন বলে।
- প্রবাসী লোন : দেশের বাইরে যাবার জন্য প্রবাসীদের যে ধরনের লোন প্রদান করা হয় তাকে প্রবাসী লোন বলে।
- চিকিৎসা লোন : অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য ব্যাংক যে ধরনের লোন প্রদান করে তাকে চিকিৎসা লোন বলে।
- এস এম ই লোন : মাঝারি ও ক্ষুদ্র আকারের ব্যবসা করার জন্য ব্যাংক যে ধরনের লোন প্রদান করে তাকে এস এম ই লোন বলে।
- জরুরী লোন : গ্রাহকদের জরুরি কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংক যে ধরনের লোন দিয়ে থাকে তাকে জরুরি লোন বলে।
- অটো লোন : কোন ধরনের যানবাহন ক্রয় করার জন্য ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের যে ধরনের লোন প্রদান করে তাকে অটো লোন বলে।
বর্তমানে ব্যাংকগুলো এইসকল খাতে তাদের গ্রাহকদের লোন প্রদান করে থাকে। এছাড়াও সামাজিক অনুষ্ঠান পালনের জন্য ব্যাংক লোন প্রদান করে যেমনঃ বিবাহ ও জন্মদিনের অনুষ্ঠান ইত্যাদি এই সকল ক্ষেত্রেও ব্যাংক গ্রাহকদের ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে।
কোন ব্যাংক থেকে লোন নেয়া ভালো
কোন ব্যাংক থেকে আপনারা লোন নিবেন সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার নিজের উপরে। আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী আপনি নিকটস্থ যে কোন ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন তবে লোন নেয়ার আগে আপনাকে ব্যাংক এর নিয়মাবলী ভালোভাবে জেনে নিতে হবে এবং কত পার্সেন্ট হারে আপনাকে সুদ প্রদান করতে হবে সেটা সঠিকভাবে জানতে হবে।
লোন নেয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের বাছাই করতে হবে কোন ব্যাংক থেকে লোন নিলে ইন্টারেস্টের হার কম এবং সুযোগ সুবিধা বেশি আপনারা সেই ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারেন। কোন ব্যাংক থেকে লোন নিবেন সেটা সম্পূর্ণ নির্বাচন করার দায়িত্ব আপনার। আপনার সুবিধা অনুযায়ী আপনি যে কোন ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণ করতে পারবেন।
ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার শর্তাবলী
ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে ব্যাংকের শর্তাবলী মানতে হবে, আপনি ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার আগে খোঁজ নিবেন ওই ব্যাংকের লোন দেয়ার ক্ষেত্রে কি কি শর্তাবলী আছে এবং সেই শর্তাবলী গুলো সঠিকভাবে পূরণ করে তারপরে ব্যাংক থেকে লোন নিবেন। ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে পূর্বে সিলেক্ট করতে হবে আপনি কোন খাতে লোন নিতে চাচ্ছেন।
ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে লোন নেয়ার কারণ উল্লেখ করতে হবে এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও আপনার লেনদেনের হিস্ট্রি সম্পর্কে তাদের অবগত করতে হবে। আপনি কেন লোন নেয়ার চাচ্ছেন লোনের টাকা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি সে সম্পর্কে তাদের জানাতে হবে। এরপরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরে ব্যাংক আপনাকে লোন দিবে।
ব্যাংক লোন নেয়ার আগে যে সকল বিষয়গুলো জানতে হবে
ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে যে সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হতে হবে। প্রথম আপনি যে ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার পরিকল্পনা করছেন ওই ব্যাংক সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। ব্যাঙ্কে লোনের জন্য আবেদনের পূর্বে আপনি যে পরিমাণ টাকার জন্য আবেদন করবেন ওই টাকার কিস্তি কত করে সে সম্পর্কে জেনে নিবেন।
লোন নেয়ার আগে অবশ্যই ব্যাংক থেকে লোন এর সময়সীমা ও সুদের হার সম্পর্কে জেনে নিবেন। এবং ওই ব্যাংক থেকে লোন নিতে প্রসেসিং চার্জ কত সে সম্পর্কে জেনে নিবেন। বিশেষ করে আপনার লোন নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাংকের কাছ থেকে এই লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া উচিত।
ব্যাংক লোন আবেদন করার নিয়ম
ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করতে হলে প্রথমে আপনাকে ওই ব্যাংক লোন সম্পর্কে জেনে নিতে হবে এরপরে ব্যাংক লোনের আবেদন ফরম এনএফ সংগ্রহ করে ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। আপনি কত টাকা লোন নিতে চাচ্ছেন সেটা উল্লেখ করে দিবেন এবং কি কারণে লোন নিতে চাচ্ছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।
সঠিকভাবে ফরমটি পূরণ করে ব্যাংকের কাছে জমা দিন এবং ব্যাংকের কর্মকর্তারা আপনার ফরমটি চেক করে আপনাকে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য কল করবে। এর পরে আপনি ব্যাংকে উপস্থিত তাহলে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হবে যেমনঃ আপনি কি কারণে লোন নেয়ার যাচ্ছেন এবং কত টাকা লোন নেয়া চাচ্ছেন ইত্যাদি।
এরপরে ব্যাংক আপনাকে বিভিন্নভাবে ভেরিফিকশন করবে আপনি যদি ভেরিফিকেশনের উত্তীর্ণ হন তাহলে নির্দিষ্ট কাগজপত্র জমা দেয়ার মাধ্যমে আপনারা ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারেন। এই লোনের টাকা সরাসরি আপনার একাউন্টে জমা হয়ে যাবে এছাড়া আপনারা চাইলে ক্যাশ হাতে আনতে পারেন এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার উপর।
ব্যাংক লোন আবেদনের জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে
সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে উপরে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি, ব্যাংক থেকে লোন এর জন্য আবেদন করতে আমাদের যে সকল কাগজপত্র লাগবে সেগুলো হলোঃ
- সদ্য তোলা ছবি
- ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
- যে কোন বিলের কপি
- সেলারি সার্টিফিকেট
- ইনকাম ট্যাক্স অনুলিপি
- অফিস আইডির কপি
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট
- চেকবুক পেইজ,ইত্যাদি।
সাধারণত ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার জন্য এই সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হয় এর বাহিরে যদি কোন কাগজপত্র প্রয়োজন হয় তাহলে ব্যাংক আপনাকে জানিয়ে দিবে। লোন নেয়ার আগে অবশ্যই ব্যাংকের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নিবেন কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।
ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার আবেদন প্রক্রিয়া একটু জটিল তবে আপনারা যদি সঠিকভাবে এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে পারেন তাহলে আপনারা খুব সহজে ব্যাংক লোন পেয়ে যাবেন। এই লেখাটিতে আমরা সহজে ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি।