সম্প্রতি বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে নিজের ফেসবুকে বোমা ফাটালেন তামিম ইকবাল খান। বিসিবির ঘোষিত বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি বিশ্বসেরা ওপেনার এবং বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল খানের।
তামিম ইকবাল খান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদেশে Retirement ভেঙে পুনরায় যুক্ত হন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে শুধুমাত্র বিশ্বকাপ খেলার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তামিম ইকবাল খানের সাথে ঘটে গেল কাল চুপি ঘটনা। ২৭ তারিখ বিকেল ৫টার দিকে একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি সম্পূর্ণ ঘটনা বিশ্লেষণ করেন।
ভিডিওটি আপনারা তামিম ইকবাল খানের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে পেয়ে যাবেন। চলুন জেনে নেই সেই ভিডিও বার্তায় দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে নিজের ফেসবুকে বোমা ফাটালেন তামিম ইকবাল খান।
তামিম ইকবাল খান জানানঃ- গত দুই তিন দিন মিডিয়াতে যে সকল ঘটনা প্রচার করা হয়েছে এবং বাস্তবের ঘটনার সাথে অনেকটা অমিল রয়েছে। তিনি মনে করেন, তার সাথে যে সকল ঘটনা ঘটেছে সেগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তদের অবশ্যই জানা দরকার।
তিনি আরো বলেন – আপনারা সকলেই জানেন আমি কয়েকদিন আগে কিছু কারণে রিটায়ারমেন্ট করি, তারপরে প্রাইম মিনিস্টারের রিকোয়েস্ট এ পুনরায় রিটায়ারমেন্ট থেকে ফেরত আসি। তারপরের প্রায় ২ মাস সময় নিজেকে ফিট করার জন্য প্রচন্ড কষ্ট করি।
এবং আমার সাথে যারা যারা যুক্ত ছিল ফিজিও, ট্রেইনার সবাই আমার সাথে একমত হবে। নিজেকে ফিট করার জন্য যত ধরনের সেশন ও এক্সারসাইজ ছিল সব কমপ্লিট করি।
একজন প্লেয়ার যখন ৫-৬ মাস পরে পুনরায় ক্রিকেটে ফিরে এসে, ৩০-৩৫ ওভারের মতো ফিল্ডিং করে, আনফরচুনেটলি ব্যাটিং করতে পারলাম না। দ্বিতীয় ম্যাচ ব্যাটিংয়ের সুযোগ আসলো, আমার কাছে থাকা সর্বশ্রেষ্ঠ রেজাল্ট প্রদানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা ম্যাচটি হেরে গেলাম।
আমি আমার ব্যাটিংয়ে খুবই খুশি ছিলাম। আমি ৪৪ রানের একটি বড় স্কোর করেছি। খেলার পরে আমি মানসিকভাবে অনেক খুশি ছিলাম। পুরনো কথাগুলো আমার মাথায় তেমন ছিল না, আমি পুনরায় ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হতে চেয়েছি। আমি বিশ্বকাপে খেলার আশা করেছি।
সাধারণত আপনি যখন কয়েক মাস পরে পুনরায় ক্রিকেটে ফিরে আসবেন এবং আপনি একটি ইনজুরি থেকে ব্যাক করবেন, তখন আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা থাকবে। এটা স্বাভাবিক, আমার বেলায়ও তেমনটা হয়েছে।
প্রথম ম্যাচে খেলার পরে আমার শরীর ব্যথা ফিল করেছি। এবং দ্বিতীয় ম্যাচেও হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে খেলা শেষ হওয়ার পরে আমি আমার অবস্থান সম্পর্কে ফিজিওকে জানালাম। ঠিক ওই মুহূর্তে তিনজন সিলেক্টর ড্রেসিংরুমে আসে।
তিনি আরো বলেন – আমি আপনাদের একটা বিষয় ক্লিয়ার করে দিতে চাই। আমি কখনো, কোন সময়, কাউকে বলিনি আমি ৫টা ম্যাচের বেশি খেলতে পারবো না। এই কথাটি কখনোই হয়নি, এবং আমি আশাবাদী কালকে নান্নু ভাই এই কথাটি ক্লিয়ার করেছে।
এটা একটি ভুল কথা। আমি জানিনা মিডিয়া কিভাবে এই কথাগুলো প্রচার করছে। আমি সিলেক্টরদের যেই কথা বলেছি, আমার বডিটা এরকমই থাকবে (শরীরে হালকা ব্যথা থাকবে ইত্যাদি) আপনারা যখন টিম সিলেক্ট করবেন, এই জিনিসটা মাথায় রেখে টিম সিলেক্ট করিয়েন।
জানতে পারেনঃ বিপিএল লাইভ খেলা দেখার লিংক।
আমার এই কথার কারণ, যেকোনো সময় যেকোন প্লেয়ার দুটো ম্যাচ খেলার পরে ইন্জোর হতে পারে। এটা স্বাভাবিক! তাই রিপ্লেস প্লেয়ার রাখা ভালো। এবং ফিজিওর রিপোর্ট ও ভালো ছিল। আমার শরীরে ব্যথা থাকতে পারে কিন্তু আমি ইন্জোর হয়নি এখনো, তাই মনে করি বিশ্বকাপে না যাওয়ার এটা কোন কারণ হতে পারে না।
তার ১-২ দিন পরে, বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ব্যক্তি ফোন করেন। তিনি বলেন “তুমিতো ওয়ার্ল্ড কাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাইতে হবে, তুমি একটা কাজ কর তুমি প্রথম ম্যাচ খেলিয়োনা” তো আমি বললাম এটাতো অনেক দিন পরের কথা, তখন তো আমি ভালো পজিশনে থাকতে পারি, আমি কেন প্রথম ম্যাচ খেলবনা।
তখন ওই লোক বলল “আচ্ছা তুমি যদি খেলো, আমরা একটা প্ল্যান করতেছি, তুমি যদি খেলো তোমাকে আমরা নিচে ব্যাটিং করাব” তখন আমার পক্ষে এইসব কথা নেওয়া সম্ভব হলো না। আমি একটা ভালো মাইন্ড সেটে ছিলাম, আমি গত ১৭-১৮ বছর ধরে এক পজিশনে ব্যাটিং করে আসছি।
অন্যসব পজিশনে ব্যাটিং করার অভিজ্ঞতা আমার নেই। তখন আমি এই কথাগুলো ভালোভাবে নেইনি, আমার মনে হচ্ছে আমাকে ইচ্ছে করে অনেক জায়গায় বাধা দেয়া হচ্ছে। তখন আমি বললাম আপনাদের যদি এ ধরনের চিন্তাধারা থাকে তাহলে আমাকে পাঠাইয়েন না, আমি নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না।
তারপরে ওই ব্যক্তির সাথে ফোনে অনেক কথা হয়। যেগুলো আমার এই প্লাটফর্মে শেয়ার করা উচিত নয়।
তামিম ইকবাল আরো বলেন – আমার কাছে মনে হচ্ছে মিডিয়াকে এইসব জিনিস ফিট করা। একটা বড় জিনিসকে চাপা দেয়ার জন্য, অন্য একটা জিনিস দাঁড় করিয়ে দেয়া। এর থেকে বেশি কিছু আমার বলার নেই, এই কয়দিনে আমার সাথে যা করেছে তা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
আমি আশা করি বাংলাদেশ টিম ওয়ার্ল্ডকাপে ভালো করবে, তারা যতটুকু সম্ভব বাংলাদেশের জন্য সফলতা নিয়ে আসবে। শুভকামনা রইল বাংলাদেশ টিমের জন্য।
সাথে অনেক ঘটনা রয়েছে, আশা করি আপনারা দেখেছেন এবং জানেন। ১ টা ঘটনা ভুলবশত হতে পারে, ২ টা ঘটনা ভুল বোঝাবুঝির জন্য হতে পারে কিন্তু ১ জনের সাথে লাস্ট ৩-৪ মাসে ৭-৮টা ঘটনা এটা ইনটেনশনাল বা ইচ্ছে করে হয়।
আমার আর কিছু বলার নেই। আপনারা ভালো থাকবেন, আমার জন্য দোয়া করবেন। আর সবাইকে একটাই অনুরোধ করব আমাকে মনে রাইখেন। ভালো থাকেন সবাই ধন্যবাদ।
তামিম ইকবাল এভাবেই তার ভিডিওর বার্তা শেষ করেন। তার লাস্টের কথাগুলো ছিল হৃদয় বিধারক। তিনি কতটা কষ্ট নিয়ে এই কথাগুলো বলেছে তা শুধুমাত্র ভিডিও দেখলে বোঝা সম্ভব। তামিম ইকবালের এই দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে আপনাদের মতামত অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।
আশা করি দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে নিজের ফেসবুকে বোমা ফাটালেন তামিম ইকবাল খান, তার বার্তা সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন।